বাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে দুই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে পাঁচ জেলায় ৪৮ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে ‘বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় রোববার সকাল ৬টা থেকে এই ধর্মঘট পালনের কথা জানিয়েছেন পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মুছা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “চার দফা দাবিতে আমরা যাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত বাস, মিনিবাস, কোচ, টেম্পো, অটোরিকশাসহ সব ধরনের গণপরিবহনে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি চলবে।
“বিভিন্ন সময় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলার পরও আমাদের দাবিগুলোর সুরাহা হয়নি তাই বাধ্য হয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করতে হল।”
শনিবার দুপুরে বন্দর নগরীর বিআরটিসি মার্কেটে ‘বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’ এর অস্থায়ী কার্যালয়ে সভায় ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়।
চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে ‘নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে’ ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার পরিবহন শ্রমিকদের মুক্তিসহ চার দাবিতে এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে বলে জানান মুছা।
২২ এপ্রিল বিকালে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সেলিনা কাদের চৌধুরী কলেজ সংলগ্ন এলাকায় ‘শাহ আমানত’ পরিবহনের একটি বাসের সাথে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত হন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ২০তম ব্যাচের শান্ত সাহা ও ২১তম ব্যাচের তৌফিক হোসেন। গুরুতর আহত একজন।
রাতে ওই ঘটনার খবরে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের চুয়েট সংলগ্ন অংশে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ভাঙচুর করেন শাহ আমানত পরিবহনের কয়েকটি বাস।
পরদিন মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ওই ঘটনায় বৈঠক হয়। সেখানে নিহত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও সড়ক সম্প্রসারণসহ বেশকিছু দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়
বুধবার শাহ আমানত পরিবহনের সেই বাসের চালককে গ্রেপ্তার করা হয়। সেদিনও সড়ক অবরোধ করে নিহতদের পরিবারকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে আন্দোলনে অনড় থাকেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আবারো গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস ত্যাগের নির্দেশ দেন। তবে সেদিনই উপাচার্যসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ করেন আন্দোলনকারীরা। তারা চুয়েটের সবগুলো বিভাগে তালা মেরে দেন। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে চুয়েট কর্তৃপক্ষ শুক্রবার সিদ্ধান্ত বদলে শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাসে থাকার অনুমতি দেন।
শনিবার সকালে আবারো সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যে দুপুরেই জরুরি সভায় ধর্মঘটের ডাক দিল চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মুছা বলেন, “প্রথম দফা হল- বিভিন্ন সময় জেলার বিভিন্ন পোস্ট ও স্টেশন থেকে লাইনম্যানসহ অনেক পরিবহন শ্রমিককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়, মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। এমনকি যাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই তাদেরও মামলার আসামি করা হয়।
“কখনো গাড়ি পার্কিং, কখনো কাগজ না থাকা এমন সব অহেতুক অজুহাতে ধরে নিয়ে যায়। পরিবহন শ্রমিকদের পকেটে থাকা টাকা কেড়ে নিয়েও তাদের হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়। শফি নামে আমাদের এক পরিবহন শ্রমিক নেতাসহ কয়েকজন এখনো জামিন পায়নি।”
দ্বিতীয় দফার বিষয়ে তিনি বলেন, “কয়েকদিন আগে চুয়েটের তিনজন শিক্ষার্থী একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পড়েন। এতে আমরা মর্মাহত। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে টানা সড়ক অবরোধ ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
“ওই ঘটনায় প্রশাসনের উপস্থিতিতে বৈঠকের পরও সেসব সিদ্ধান্ত না মেনে সড়কে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।”
মুছা বলেন, “কক্সবাজারে তিন মাস আগের একটি সড়ক দুর্ঘটনার জেরে সংশ্লিষ্ট পরিবহনের অন্য একটি বাস স্থানীয় একজন চেয়ারম্যান আটকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয় এবং এই কাজে একজন স্থানীয় এমপির নাম ব্যবহার করা হয়। এই অত্যাচার বন্ধ করতে হবে।
“পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে আমরা বলছি, অবৈধ ও অনুমোদনহীন যানবাহনের জন্য সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। সেসব অনুমোদনহীন যান চলাচল বন্ধ না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের যানবাহনের উপর দায় চাপাচ্ছে। অবৈধ গাড়ি চলাচল বন্ধের দাবি আমাদের চতুর্থ দফা।”
গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মনজুরুল আলম চৌধুরী, শ্রমিক নেতা মৃণাল চৌধুরী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।