সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলনে নেমেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল থেকে আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে কোটা আন্দোলনে যোগ দেন শিক্ষার্থীরা৷
বেলা আড়াইটায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ঢাবির সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া, ভিসি চত্বর, রাজু ভাস্কর্য হয়ে হাইকোর্ট অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। এরপর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তারা শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেন।
মিছিলে আন্দোলনকারীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ৭১ এর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ প্রভৃতি বলে স্লোগান দেন৷ মিছিলটি শাহবাগে পৌঁছানোর আগেই সেখানে সড়কের ওপর বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য অবস্থান করছিলেন৷ তবে পুলিশ তাদের বাধা দেয়নি৷
অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে৷ তৈরি হয়েছে তীব্র যানজট৷ গতকালও এক ঘণ্টার জন্য শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিলেন এ আন্দোলনকারীরা৷
আন্দোলনকারীরা জানান, তাদের আজকের কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজধানীর সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন৷ কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন৷ সবার দাবি, আগামীকাল উচ্চআদালতে যে শুনানি রয়েছে, সেখানে যেন আপামর শিক্ষার্থীদের স্বার্থের পক্ষে রায় দেন৷
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল৷ এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল৷ ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়৷ কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা৷ পরে সে বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিল বিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়৷
এরপর ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন৷ সেই রিটের রায়ে ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়৷ এরপর থেকেই চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছেন৷
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ এই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি আরও কিছু দাবি জানাচ্ছেন৷ এগুলো হলো- পরবর্তী সময়ে সরকার কোটাব্যবস্থা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া, সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করার সুযোগ বন্ধ করা ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া৷