বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বে ভারতে নতুন তিন ফৌজদারি আইন কার্যকর করেছে মোদির সরকার। সোমবার (১ জুলাই) থেকেই ব্রিটিশ আমলের তৈরি ফৌজদারি আইন বাতিল করে কার্যকর হলো এ আইন। এরই মধ্যে নতুন ফৌজদারি আইনের আওতায় প্রথম এফআইআর দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ। নয়াদিল্লি রেল স্টেশনের কাছে একটি রাস্তা ঘিরে ব্যবসা চালানোর জন্য এক হকারের বিরুদ্ধে নতুন ফৌজদারি আইনের ২৮৫ ধারার অধীনে পুলিশ এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। খবর এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর ভারতে নতুন আইন কার্যকর করা হয়েছে। মোদি সরকারের দাবি, ব্রিটিশ আইনে এতো দিন সাজার কথা বলা ছিল। এবার নতুন আইনে সাধারণ মানুষ যাতে ন্যায় পান সেই ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, সবার জন্য দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্যই এ পরিবর্তন করা হয়েছে।
এনডিটিভি বলছে, এরই মধ্যে ভারতে নতুন আইনে একজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। নয়াদিল্লি রেল স্টেশনের কাছে একটি রাস্তা ঘিরে ব্যবসা চালানোর জন্য এক হকারের বিরুদ্ধে ২৮৫ ধারার এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত হকারের নাম পঙ্কজ কুমার। তিনি বিহারের পটনার বাসিন্দা।
২৮৫ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি তার দখলে থাকা সম্পত্তির মাধ্যমে অন্যের যাতায়াতের পথে বাধা সৃষ্টি করেন অথবা অন্য কোনও ব্যক্তির বিপদ, বাধা বা আঘাতের কারণ হন, তা হলে শাস্তিস্বরূপ তাকে জরিমানা দিতে হবে। যা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সেই ধারাতেই এফআইআর দায়ের হল দিল্লির ওই হকারের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, ১৮৬০ সালে তৈরি ইন্ডিয়ান পেনাল কোড বা ভারতীয় দণ্ডবিধির পরিবর্তে হয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা। ১৮৯৮ সালের ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্ট বা ফৌজদারি দণ্ডবিধির নতুন রূপ ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ১৮৭২ সালের ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট বা ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের বদলে কার্যকর হচ্ছে ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম।
ন্যায় সংহিতায় নতুন ২০টি অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। বাদ পড়েছে ভারতীয় দণ্ডবিধিতে থাকা ১৯টি বিধান। ৩৩টি অপরাধের জন্য কারাদণ্ডের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।৮৩টি অপরাধের জন্য জরিমানার পরিমাণও আগের তুলনায় বেড়েছে। পরিবেশ দূষণ ও মানব পাচারের মতো অপরাধকে ন্যায় সংহিতায় সাজার আওতায় আনা হয়েছে। যুক্ত করা হয়েছে সাইবার অপরাধ এবং আর্থিক প্রতারণার মতো নতুন অপরাধ।
নতুন আইনে নারী সুরক্ষা এবং নারীদের সঙ্গে ঘটা বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্রে বিধি আরো কঠোর করা হয়েছে। ১৮ বছরের কমবয়সী বা নাবালিকা ধর্ষণে সাজা মৃত্যুদণ্ড বা আজীবন কারাদণ্ড এবং গণধর্ষণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২০ বছর থেকে আজীবন কারাদণ্ডের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
কংগ্রেসসহ অন্য বিরোধী দলগুলিও তাড়াহুড়ো করে বিল পাশের বিরোধিতা করেছিল। এখনই আইন বলবৎ না করে পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও লিখেছিলেন তিনি। এসব বিতর্কের মধ্যেই সংসদের দুই কক্ষেই পাশ হয়ে যায় তিন অপরাধমূলক আইনের বিল। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সেই বিলে সই করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।