বিশেষ পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা মেয়র এবং কাউন্সিলরদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে অধ্যাদেশের (খসড়া)-২০২৪ এর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। শনিবার এই গেজেট প্রকাশ করা হয়।
শনিবার (১৭ আগস্ট) ‘স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’; ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’; ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এবং ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
এর আগে শুক্রবার (১৬ আগস্ট) অধ্যাদেশগুলোর খসড়া অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। এতে জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং অন্য সদস্যদের অপসারণ করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে।
সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারির লক্ষ্যে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশসমূহের খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন করা হয়েছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান অধিক্ষেত্রে জনগণকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়া নিশ্চিতকরণ, প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান রাখা ও জরুরি কারণে অধ্যাদেশগুলোর খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন করা হয়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি উদ্ভূত বিশেষ পরিস্থিতির কারণে কোনো কোনো জনপ্রতিনিধি তাদের কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। ফলে জনগণের বিভিন্ন সেবা প্রাপ্তি বিঘ্নিত হচ্ছে।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশসমূহে নতুন কিছু বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-(১) জনস্বার্থে প্রস্তাবিত ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ধারা-১৩ (ক) ও ধারা ২৫ (ক)। ১৩ (ক) এ বলা হয়েছে-বিশেষ পরিস্থিতিতে মেয়র এবং কাউন্সিলরদের অপসারণের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা-(১) এই আইনের অন্যান্য বিধানে কিংবা আপাতত বলবৎ অথবা অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার, অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং কাউন্সিলরদের অপসারণ করতে পারবে।
বিজ্ঞাপন
(২) বিধি দ্বারা নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ, সরকারি গেজেটে আদেশ দ্বারা, উপধারা (১)-এর মাধ্যমে বর্ণিত মেয়র এবং কাউন্সিলরের অপসারণ কার্যকর করতে পারবে। ২৫ (ক) এতে বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। এতে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে-(১) এই আইনের অন্যান্য বিধানে কিংবা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশনে নির্দিষ্ট মেয়াদ উল্লেখ করে অথবা পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত উহার কার্যাবলী সম্পাদনের উদ্দেশ্যে, একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করতে পারবে।
(২) সরকার, প্রয়োজনবোধে, যথাযথ বলিয়া বিবেচিত হয় এমন সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে প্রশাসকের কর্ম সম্পাদনে সহায়তা প্রদানের জন্য নিয়োগ করতে পারবে। (৩) উপধারা (১) অনুযায়ী নিযুক্ত প্রশাসক এবং উপধারা (২) অনুযায়ী নিযুক্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ, যদি থাকে, যথাক্রমে মেয়র ও কাউন্সিলরের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। (২) প্রস্তাবিত ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এই দুটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। তা হলো ধারা-৩২ (ক) ও ধারা-৪২ (ক) এবং ধারা-৩২ (ক)। বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনায় জনস্বার্থে সরকার কোনো পৌরসভার মেয়র বা কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে। ধারা-৪২ (ক) অনুযায়ী বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনায় জনস্বার্থে সরকার কোনো পৌরসভায় একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করতে পারবে।
(৩) প্রস্তাবিত ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর দুটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। তা হলো ধারা-১০ (ক) ও ধারা-৮২ (ক)। ধারা-১০ (ক) এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে অপসারণ করতে পারবে। ধারা-৮২ (ক) অনুযায়ী- বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে। (৪) ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এ প্রস্তাবিত ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এই দুটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। তা হলো-ধারা ১৩ (ঘ) ও ধারা- ১৩ (ঙ)। ১৩ (ঘ)-তে বলা হয়েছে-বিশেষ পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান বা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বা অন্য সদস্যদের অপসারণের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা এবং ১৩ (ঙ)-তে- বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রশাসক নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।