ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নে দুর্গম চরে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের ছোবলে হোসেন ব্যাপারী (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মৃত হোসেন ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ৩৮ দাগ এলাকার পরেশউল্লা ব্যাপারীর ছেলে।
কৃষক হোসেনের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি মেম্বার হেলালউদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে হোসেনকে সাপে ছোবল দেয়। পরে তাকে ট্রলারযোগে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে ফরিদপুর হাসপাতালে আনা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। তার আগেই শুক্রবার তার মৃত্যু হয়।
এদিকে পার্শ্ববর্তী ডিক্রিরচর ইউনিয়নে গত দুদিনে দুটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পেয়ে সেগুলো পিটিয়ে মেরেছে গ্রামবাসী। এছাড়া শুক্রবার সকালে ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের আইজউদ্দীন মাতুব্বরের ডাঙ্গি গ্রামে খেতে কাজ করার সময় একটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পান ওই গ্রামের তোতা মোল্লার ছেলে মুরাদ মোল্লা (৪৫)।
মুরাদ মোল্লা বলেন, সকালে বাদামের জমিতে কাজ করার সময় সাপটি নজরে পড়ে। এরপর লাঠি দিয়ে সাপটি মেরে ফেলি। আগের দিন ওই গ্রামের হারুন শেখের ছেলে ইউসুফ আরও একটি রাসেলস ভাইপার সাপ পিটিয়ে মেরে ফেলেছেন বলে জানান তোতা মোল্লা।
খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে ডিক্রিরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আবু ফকির বলেন, সম্প্রতি ওই এলাকায় রাসেলস ভাইপার সাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মাঝেমধ্যেই তারা এই সাপ দেখতে পাওয়ার খবর পাচ্ছেন।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার ২০ জুন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফ দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক প্রস্তুতি সভায় রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রবে চরাঞ্চলের মানুষের উদ্বেগের বিষয়টি উল্লেখ করে রাসেলস ভাইপার সাপ মারতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ফরিদপুর সদরে কেউ একটি রাসেলস ভাইপার সাপ মারতে পারলে তাকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে।
শুক্রবার ইশতিয়াক আরিফ তার ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন। তিনি বলেন, সুরক্ষিত পোশাক পরিধান করে কেউ যদি জীবন্ত রাসেলস ভাইপার সাপ ধরে আনতে পারে তবে তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।
ওই নেতার আগের বক্তব্যের বিষয়ে ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া জানান, যেকোনো বন্য প্রাণী নিধন আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ।
তিনি আরও বলেন, রাসেলস ভাইপার এ দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ২০১৪ সাল থেকে আবার সাপটির দেখা যাচ্ছে। এ সাপের বংশ বৃদ্ধির হার বেশি। একবারে একটি মা সাপ ৬০ থেকে ৭০টি বাচ্চা দেয় এবং প্রায় সবকটি বেঁচে যায়। এ সাপ সাধারণত চর এলাকায় থাকে।
এদিকে রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে জরুরি নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামান্ত লাল সেন। দেশের সব হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুদ রাখার পাশাপাশি কোনো অবস্থাতেই যেন অ্যান্টিভেনমের স্টক খালি না থাকে, সেই নির্দেশনাও দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
শনিবার সকালে সারা দেশের সিভিল সার্জন, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, বিভাগীয় পরিচালক, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকসহ দেশের সমগ্র স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি এসব নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, রাসেলস ভাইপার নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি জনগণকে বলব, আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। রাসেলস ভাইপারের যে অ্যান্টিভেনম সেটা আমাদের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত মজুদ আছে। আমি পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছি কোনো অবস্থাতেই অ্যান্টিভেনমের ঘাটতি থাকা যাবে না।