দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া গেছে তাতে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের অপরাধলব্ধ আয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম।
বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, এখন মামলা কখন হবে সেটা দুর্নীতি দমন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ এবং ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে গত ৩১ মার্চ ও ২ এপ্রিল পৃথক দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এরপর দুদকের উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। টিমের অপর সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।
পাশাপাশি সালাহ উদ্দিন রিগ্যান নামের একজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। পরে ২৩ এপ্রিল পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের করা কমিটির অগ্রগতি প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট। দুই মাসের মধ্যে কমিটিকে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
এরপর দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন দফা তার এবং পরিবারের সদস্যদের সম্পদ জব্দ ও ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়। আদেশ অনুসারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ সম্পদগুলো তত্ত্বাবধানে নেয়।
সাবেক আইজিপির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে সে বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, উনার সন্দেহজনক লেনদেন আছে। অপরাধলব্ধ আয় আছে। অপরাধ লব্ধ সম্পত্তি আছে। এগুলো যাচাই করছি, দেখছি। আরও সম্পদ আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখছি। সাবেক আইজিপির যে কর্মকাণ্ড অপরাধলব্ধ আয় এটা খুব বিপদজনক। আমি ব্যক্তিগতভাবে হতাশ। সর্বোচ্চ পদে একজন পুলিশ বাহিনীর সাবেক প্রধান হিসেবে এভাবে অপরাধলব্ধ আয়ের সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে গেলেন। কেন এত অপরাধলব্ধ আয় তার পরিবারের জন্য করলেন। এটা বিশাল প্রশ্ন। কোনো বাহিনী প্রধানের বিরুদ্ধে এমন হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
এর আগে দুই দফায় গত ২৩ ও ২৬ মে দুই দফায় বেনজীর, তার স্ত্রী ও তিন কন্যার নামে থাকা প্রায় ৬১২ বিঘা সম্পত্তি ও গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট ক্রোক ও বেশ কিছু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার আদেশ দেন আদালত। গত ৬ জুন এসব সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগের আদেশ দেন আদালত।
গতকাল বুধবার পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মীর্জাসহ মেয়েদের নামে থাকা আটটি ফ্ল্যাটসহ আরও সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুদকের অনুসন্ধানকারী টিমের প্রধান উপ-পরিচালক মো. হাফিজুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই আদেশ দিয়েছেন। যার মধ্যে রূপগঞ্জে ২৪ কাঠা, উত্তরায় ৩ কাঠা, বাড্ডায় ৩৯.৩০ কাঠা জমির ওপর দুটি ফ্ল্যাট, বান্দরবান জেলায় ২৫ একর জমি (লিজ), স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে বাদাবরানার পিসি কালচার এলাকায় ৬টি ফ্ল্যাট ক্রোক করা হয়েছে। এছাড়া গুলশানে বাবার কাছ থেকে পাওয়া ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ মূলে সম্পত্তিতে ৬তলা ভবন, সিটিজেন টিভিতে শেয়ার ও টাওয়ার অ্যাপারেলস (গার্মেন্টসে) শেয়ার অস্থাবর জমি ফ্রিজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিটিজেন টেলিভিশনের শেয়ারসহ কোম্পানির শেয়ার জব্দের আদেশ হয়েছে।