গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে চলমান আন্দোলন শিগগিরই আরো বেগবান হবে বলে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি, আমাদের ইতিমধ্যে অনেক অর্জন হয়েছে। সবচেয়ে বড় অর্জন হয়েছে, আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে একেকজনের একেক চিন্তা আছে, কেউ বাম চিন্তার, কেউ ডান চিন্তার আবার, কেউ অতি বাম চিন্তার। সবগুলোকে মিলিয়ে আমরা আন্দোলনে একমত হয়েছি।
১২ জুন, বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সরকার পরিবর্তনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এক মতবিনিময়সভায় বিএনপি মহাসচিব একথা জানান।
এসময় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রাক্বালে বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান দলটির মহাসচিব। সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র সংকট-উত্তরণের পথ’ শীর্ষক এই মতবিনিময়সভা হয়।
বিরোধী রাজনৈতিক দলের ঐক্য ‘একাট্টা’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সমস্ত রাজনৈতিকগুলোর আলোচনার ভিত্তিতে কাজ করেছি।
আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। সেই ৩১ দফাতে এদেশের প্রত্যেক মানুষের কথা বলা আছে, রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তনের কথা বলা আছে, অর্থনীতি কাঠামো পরিবর্তনের কথা বলা আছে, সবগুলো দিক সেখানে বলা আছে। এই ৩১ দফা এখন জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। জনগণের একটা জিনিসে স্থির, সেটা হচ্ছে, তারা এই সরকারকে চায় না। এটা হচ্ছে মূল কথা। এটা আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে। আমরা কি করে জনগণের না চাওয়ার যে ইচ্ছা আমরা সেটাকে আমরা কি করে ইতিবাচক কাজে নিয়ে গিয়ে তাদেরকে পরাজিত করতে পারি সেই কাজটি আমাদের করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা ইতিমধ্যে সকলের সঙ্গে কথা বলছি, উনারা বলছেন, আমরা বলছি, সব দলগুলোর সঙ্গে আমরা কথা বলছি। আমি আগেই বলেছি, এখানে বাম-ডান সকলের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে আমি বলি, এই আন্দোলনে কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলই এই সরকারের পক্ষে থাকেনি, তাদেরকে সমর্থন করেনি। এটা আন্দোলনের একটা বড় সাফল্য। কেউ নির্বাচনে যায়নি, একমাত্র এই জাতীয় পার্টি ছাড়া কেউ কিন্তু তথাকথিত সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সেজন্য আমি সবসময় বলি, আপনারা হটকারি করার প্রয়োজন নেই, স্থান নেই। আমরা সবাই আলোচনা করে, সবাই একমত হয়ে আমরা এই সরকারকে সরাতে পারি, কিভাবে আমরা গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে পারি, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে পারি, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে পারি সেই লক্ষ্যে আমরা সংগ্রাম করছি, সেই লক্ষ্যে আমাদের সংগ্রাম করতে হবে।
যুগপৎ আন্দোলনে ঐক্য সৃষ্টিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের ভূমিকার প্রশংসা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যুগপৎ আন্দোলন দৃঢ় করার জন্য আপনারা এখানে যারা আছে সবাই কাজ করছেন। আমি আপনাদের কাছে একটাই অনুরোধ করব যে, আপনারা এমন কোনো কথা বলবেন না যাতে এই ঐক্যে কখনও বিভক্তি সৃষ্টি হয়, ঐক্য বিনষ্ট হয়। সবাইকে নিয়ে আসতে হবে।
এখন আমাদের প্রধান শত্রুটা হচ্ছে এই সরকার উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, যারা আমাদের সব কিছুকে ধবংস করে দিচ্ছে। এই সরকারকে ফেলে দেওয়ার জন্য আমাদের সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা কাজ শুরু করেছি, শেষ পর্যন্ত আমরা সফল হবো। আজকে এখানে সকল নেতার সুর একটাই আমরা আর এই সরকারকে দেখতে চাই না। এই সরকারকে সরিয়ে জনগণের একটা শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই যেন সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক চর্চা থাকবে, গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো থাকবে, গণতন্ত্রকে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো। আসুন আমরা সবাই জনগণের সঙ্গে থেকে, জনগণকে পাশে নিয়ে আমরা সবাই লড়াই করি। সেই লড়াইয়ে এখানে মাহমুদুর রহমান মান্না সাহেব, জোনায়েদ সাকি সাহেব বলেছেন, কৌশল বদলাতে পারে কিন্তু আমাদের ঐক্য এক। আমাদের লক্ষ্য একটাই এই সরকারকে সরাতে হবে।
তরুণ-যুবকদের এগিয়ে আসার রেখে তিনি বলেন, জনগণ এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত আছে। তাদেরকে জাগিয়ে তুলতে হবে। আমি বলছি, তরুণ-যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। এ দেশে যে আন্দোলনটা করছি এটা আমাদের জন্য নয়, এটা এদেশের জন্য, এ দেশটাকে রক্ষা করার জন্য, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার জন্য, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য। যে যেখানে আছেন, যে অবস্থায় আছেন আসুন আমরা সবাই একসাথে এই লড়াইটা করি এবং এই লড়াইয়ে আমাদের দেশকে রক্ষা করি, আমাদের সংবিধানকে রক্ষা করি, আমাদের মানুষকে রক্ষা করি।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকে সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আকবর খানের সঞ্চালনায় মতবিনিময়সভায় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, এবি পার্টির এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হাকিম, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা আশরাফ আলী আখন্দ, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাগপার রাশেদ প্রধান, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের নূরুল হক নূর, অপর অংশের মিয়া মশিউজ্জামান, ভাসানী অনুসারি পরিষদের বাবুল বিশ্বাস, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (মার্কসবাদী-লেলিনবাদী) হারুন চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নিশিখা জামালী প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন।