সোনালী লাইফে ‘অনভিজ্ঞ’ প্রশাসক নিয়োগ কার স্বার্থে?

Spread the love

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের চতুর্থ প্রজন্মের বীমা প্রতিষ্ঠান সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে ‘অনভিজ্ঞ’ প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থসিদ্ধির পথ তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করছেন কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য দায়ি করা হচ্ছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিঅরএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীকে।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি ও সুবিধা গ্রহণের বিনিময়ে একাধিক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বোর্ড ভেঙে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থসিদ্ধি করছেন জয়নুল বারী। এ জন্য তিনি ইচ্ছামতো কোম্পানি টার্গেট করেন। বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত বড় বড় কোম্পানির প্রতি জয়নুল বারীর রয়েছে সহানুভূতি। তাদের অনিয়ম তিনি দেখেও দেখেন না। এমন বহুরকম অভিযোগ রয়েছে তার প্রতি।

অর্থমন্ত্রণালয়ে কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের দেওয়া অভিযোগে আরও বলা হয়, মূলত বীমা খাতকে রক্ষা ও শৃঙ্খলিত করার জন্য আইডিআরএ গঠিত হয়। সেই রক্ষক প্রতিষ্ঠানের প্রধানই যখন ভক্ষকরূপে আবির্ভূত হয় তখন গোটা বীমা খাতই হুমকির মুখে পড়ে যায়।

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ইতিমধ্যে গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যথা সময়ে বীমা দাবি পরিশোধসহ সম্পূর্ণ অটোমেটেডভাবে কোম্পানি পরিচালিত হচ্ছে। ফলে প্রিমিয়াম সংগ্রহে ইতিমধ্যে চমক দেখিয়েছে কোম্পানিটি। এতে একটি মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে সোনালী লাইফের ক্ষতি করতে তৎপর রয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের নেতৃত্বে সোনালী লাইফ গ্রাহকের দাবি নিষ্পত্তি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ দাবি-দাওয়া পরিশোধের অনন্য নজির স্থাপন করেছে। কিন্তু এই সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে ও দুর্নীতির চেষ্টায় সুবিধা গ্রহণ করতে না পেরে মহলটি প্রতিষ্ঠানটির পেছনে লাগে।

তারা মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগ তোলে। সেই অভিযোগের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই না করে, পরিচালনা পর্ষদের কাছে ব্যাখ্যা না চেয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে আইডিআরএ চেয়ারম্যান এই প্রতিষ্ঠানে একজন অনভিজ্ঞ প্রশাসক নিয়োগ করেছেন। এই প্রশাসক মূলত ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্যই নিযুক্ত হয়েছেন।

কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার পরই কোম্পানি শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রতিপক্ষ করে তুলেছেন। তিনি কারো কথা শুনতে চান না। নিজের যা পছন্দ তাই বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন। তার অংশ হিসেবে গত মাসে উন্নয়ন কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিকেও হাত দেন। দীর্ঘদিন ধরে পেয়ে আসা কমিশন এবং ইনটেনসিভ না দিয়ে তিনি শুধু কমিশন দিয়েছেন। তার অদূরদর্শিতার কারণে মে মাসে প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে প্রায় ৪২ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদদের মতে, যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যদি কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি অথবা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ ওঠে, তাহলে সেটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুনির্দিষ্ট কিছু ধাপ রয়েছে। যেহেতু বীমা প্রতিষ্ঠানটি পাবলিক লিস্টেড কোম্পানি, সেহেতু এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের আগে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের মতামত নেওয়ার দরকার ছিল।

সেই সঙ্গে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ থাকলে বিএফআইইউকেও অবহিত করা দরকার ছিল। সবচেয়ে বড় কথা অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব ডিরেক্টরের কাছে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ দেওয়া কিংবা তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো প্রকার সুযোগ না দিয়ে রাতারাতি বোর্ড ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগের ঘটনা নজিরবিহীন।

অভিযোগ রয়েছে, আইডিআরএ চেয়ারম্যান কেবল প্রশাসক নিয়োগ দিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত কর্মীদের অদলবদল- ছাঁটাই হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

সম্প্রতি আইডিআরএ-এর বিরুদ্ধে প্রশাসক বাতিলের দাবিতে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৩০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর পক্ষে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১১ বছর সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। কিন্তু সম্প্রতি কিছু অসাধু কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রের কারণে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের মুখে। সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গ্রাহক দাবি নিষ্পত্তি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ দাবি-দাওয়া পরিশোধের ক্ষেত্রে দেশের অন্য যে কোনো কোম্পানির চেয়ে অনেকগুণ এগিয়ে।

প্রায় ৩০ হাজার মাঠকর্মীর ১১ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে ৮ লক্ষাধিক পলিসি গ্রাহক তৈরির মাধ্যমে সাফল্যের অনন্য দিগন্তে পৌঁছে যাচ্ছিল। ঠিক তখন সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রাক্তন সিইও মীর রাশেদ বিন আমান একদল স্বার্থান্বেষী মহলের সহযোগিতায় নিজের আর্থিক লাভ, জাল-জালিয়াতি ও অনৈতিক ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সোনালী লাইফের স্বপ্নদ্রষ্টা ও বিজিএমই-এর সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার পরিবারের সদস্যদের সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও প্রতিষ্ঠান দখল করার পরিকল্পনা করে। এ লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা তথা আইডিআরএ-এর চেয়ারম্যানকে হাত করে ষড়যন্ত্রকারীরা।

সরাসরি আইডিআরএ চেয়ারম্যানের পৃষ্ঠপোষকতায় কোম্পানি ও এর মাঠকর্মীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের লক্ষ্যে গত ২১ এপ্রিল একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য যিনি ইন্স্যুরেন্স সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ ও কোম্পানির মৌলিক ভিত্তি তথা ব্যবসা ও এর কর্মীদের নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা বন্ধের মাধ্যমে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুপরিকল্পিত চক্রান্তে মেতে উঠেছে।

অদক্ষ, অনভিজ্ঞ  প্রশাসক নিয়োগের কারণে গত এক মাসে কোম্পানির ব্যবসা কমেছে প্রায় ৪২ শতাংশ। এভাবে চলতে থাকলে খুব দ্রুতই কোম্পানিটি দেউলিয়া হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বেকার ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। বিপদে পড়বে তাদের পরিবার-পরিজন।

সূত্র: সকালের সময়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *