দেশের অর্থনীতির বেহাল দশার চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতায় থাকতে সরকার দেশকে পরনির্ভরশীল করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, সরকার অর্থনীতিকে ধবংস করে দিয়েছে কার স্বার্থে? অর্থনীতিকে ধবংস করে দিয়েছে সম্পূর্ণভাবে বিদেশিদের স্বার্থে। পরনির্ভরশীল একটা জাতিতে পরিণত করেছে।
৯ জুন, রবিবার দুপুরে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইউট্যাব এর উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক আলোচনাসভায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি এই অভিযোগ করেন।
এতে জিয়াউর রহমানের ওপর দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক কামরুল আহসান ও অধ্যাপক তৌফিকুল ইসলাম।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার খুব বড় বড় কথা বলে- বিএনপির সময় বাজেটের পরিমাণ ছিল এত, এখন হয়েছে এত। কিন্তু বিএনপি দেশটাকে ভালোবাসত… দেশটাকে ভালোবাসত বলে তারা চটকরে জনগণের ওপরে করের বোঝা, ঋণের বোঝা আমরা চাপাত না। আজকে ঋণের বোঝা জনগণের ওপর চাপানো হয়েছে। প্রতিটি ব্যক্তির ওপরে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা ঋণ। মাথাপিছু ঋণ এটা। এরপরও তারা বাজেট দেয় যেখানে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। আজকে এই সরকার দেশটাকে কোথায় নিয়ে গেছে?
২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের সমস্যা সমাধানে কোনো দিক নির্দেশনা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর কোনো ব্যবস্থা বাজেটে নেই। যে সমস্ত জিনিসপত্র-ম্যাসিনারিজ আমদানি করলে উৎপাদন বাড়তে পারে সেগুলোর ওপরে ট্যাক্স আরোপ করেছে। তাহলে কর্মসংস্থান হবে কিভাবে?
বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এরপরও যেসব বুদ্ধিজীবী তাদের প্রশংসা করেন তারা কি নিজেদের বিবেককে প্রশ্ন করেন? সুতরাং আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বলবো আপনারা জাতি গঠনে কাজ করুন। দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি করুন। আজকে ডাকসু নির্বাচন নেই। কোনো নির্বাচন নেই। জিয়াউর রহমানের কর্মকাণ্ড নিয়ে সারাদেশে ওয়ার্কশপ করার কথাও বলেন বিএনপি মহাসচিব।
আওয়ামী লীগের রসায়নই হচ্ছে দুর্নীতি-সন্ত্রাস উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের কেমিস্ট্রে হচ্ছে চুরি, দুর্নীতি, সন্ত্রাস। এখন তো দেখছেন চুরি, দুর্নীতি কিভাবে হচ্ছে। এত চুরি যে, ওই সময়ে তাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বলছেন, অন্য নেতারা দেশে পায় সোনার খনি আর আমি পাই চোরের খনি। এটা তার আক্ষেপের কথা।
তিনি বলেন, এরা সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধবংস করে দিয়েছে। দেশটাকে ওরা জাহান্নামে নিয়ে গেছে। এর চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারে। সমস্ত সুন্দর তারা ধবংস করে দিয়েছে। মানুষের মধ্যে যে একটা সৌহার্দ ছিল, ভ্রাতৃত্ব ছিল সেগুলো তারা ধবংস করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দলীয়করণের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।
ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দীনের সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় সাবেক সাংসদ ফজলুল হক মিলন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, ইউট্যাবের অধ্যাপক লুৎফুর রহমান, অধ্যাপক আবদুর রশীদ, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক আখতার হোসেন, অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক আলীমুর রহমান, অধ্যাপক আমজাদ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সভাপতির বক্তব্যে ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, জাতির এই দু:সময়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ আজকে বাংলাদেশের ওপর শকুনের চোখ পড়েছে। দেশের জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সবাইকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানাচ্ছি।