রুদ্র মোহাম্মদ ইদ্রিস॥
অদ্বৈত মল্লবর্মণ স্মৃতি গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়মিত আয়োজন মঙ্গল সাহিত্য আড্ডার ৫০তম পর্ব গত ০৪ জুন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জ্ঞানপিপাসূ সাহিত্যিকদের এই মঙ্গল সাহিত্য আড্ডা হাফ সেঞ্চুরি অতিক্রম করলো। ওইদিন রাত আটটায় শহরের শিমরাইলকান্দি মাজার গেইট সংলগ্ন পৌর টিকাদান কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই আড্ডা ভিন্নমাত্রা লাভ করে।
প্রথম পর্বে শুরু হয় আলোচনা। বাংলা কবিতার আদিকাল থেকে উত্তরাধুনিক কবিতা নিয়ে আলোচনা করেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব- কবি শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক। তিনি বলেন, কবিতা নিয়ত গতিশীল। গতিশীলতা না থাকলে তাকে কবিতা বলা যাবে না। তিনি বলেন, কবিতার ক্ষেত্রে ‘সময়’ একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সময়কে ধারণ করতে না পারলে কবিতায় প্রাণ থাকে না। আর প্রাণ না থাকলে সেই কবিতা বেশিদিন টিকে থাকবে না। আধুনিক কবিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব কবিতাই আধুনিক কবিতা-সেই চর্চাপদ থেকে ধরে সবই আধুনিক। আর তা যদি আধুনিক না হতো তবে আজ তা নিয়ে আমরা কথা বলতাম না। তিনি বলেন, এখানে একটা কমন বিষয় হচ্ছে কবিতাকে কবিতা হিসেবে করে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে কবিকে। আর এটা করতে পারলেই কবিতা লেখা সম্ভব। এবং আজকের আড্ডা প্রাণ পাবে। কবিতার মাঝে শিল্প বোধ কাব্যরস থাকতে হবে। এই রসবোধটা কবিতাকে জনপ্রিয় করতে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
মঙ্গল সাহিত্য আড্ডার জনক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, কবিতাবিষয়ক গবেষক, কবি ও গীতিকার মো. আ. কুদদূস বলেন, কাব্যে সৌন্দর্য আনতে হলে শব্দের দ্যোতনা সৃষ্টি করতে হবে। কবিতার পরিমিতি বোধ জানতে হবে। উপমা উৎপ্রেক্ষা সৃষ্টির কৌশল শিখতে হবে। তবেই কবিতার নান্দনিকতা ফুটে উঠবে। তিনি বলেন, কবিতায় পাঠকের জন্য একটা জায়গা করে দিতে হবে। যাকে বলে কবিতায় পাঠকের অংশিদারীত্ব। তিনি বিষয়টি নিয়ে আরও বলেন, একটি কবিতা লেখার পর একেকজন পাঠক একেক রকম স্বাদ নিবে। একেক রকম চিন্তা করবে, অথবা কবিতা পড়ার পর পাঠকের মাঝে যদি একটা আসক্তি তৈরি করা যায়, তবেই সেই কবিতা হবে আদর্শ সময়ের কবিতা, তাহলেই কবিতা জীবিত থাকবে। যাকে আমরা সময়ের প্যারামিটার দিয়ে মাপতে পারবো। এবং এটাই হলো জীবন্ত কবিতা। যা যুগ যুগ ধরে কবিকে বাঁচিয়ে রাখবে। তিনি বলেন, কবিতা হলো শব্দের খেলা। কবিতাকে নিয়ে খেলতে হবে। এখানেই কবিকে একজন আদর্শ খেলোয়াড় হয়ে উঠতে হবে। সেই খেলার জন্য প্রচুর পড়তে হবে। চর্চা করতে হবে। পড়াশোনা না করে ভালো সাহিত্য চর্চা সম্ভব নয়- এ বিষয়টির প্রতি তিনি অধিক গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমি একটি কবিতা লেখার আগে কমপক্ষে দশটি কবিতা পড়ি। তিনি বলেন, এখন ইন্টারনেটে সারা দুনিয়ার সাহিত্য। আপনি নিজেকে সময়ের সাথে আপডেট করতে হলে এবিষয় গুলো বেশি বেশি জানতে হবে।
সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি ও গবেষক জয়দুল হোসেন বলেন, কবিতা তিন রকমের। হৃদয় মস্তিষ্ক চেতনা প্রসূত কবিতার কথা বলেন তিনি। কবিতা বা সাহিত্যচর্চার জন্য এই টাইপের আড্ডার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ভালো লেখক হতে সমালোচনা মেনে নেবার মতো মানসিকতা থাকতে হবে।
আড্ডায় অনুভুতি ব্যক্ত করেন, আব্দুর রহিম, মানিক রতন শর্মা, অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর, হেলাল উদ্দিন হৃদয়, আমির হোসেন, রুদ্র মোহাম্মদ ইদ্রিস, মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কাউছার আাহমেদ, সহ প্রকৌশলী সবুজ কাজী, উপ সহকারি প্রকেীশলী সুমন দত্ত। প্রসঙ্গত:
১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শাকিল মিয়ার বিশেষ আমন্ত্রণে মঙ্গল সাহিত্য আড্ডার ৫০তম পর্বটি বেশ উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় হাজী মো. সেলিম সর্দার, মো. শাহিন মিয়াসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সবশেষে ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শাকিল মিয়া ও তাঁর পিতা সকল কবিদের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেন।