
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদকে মৃত্যুর ৫ বছর পর নানা আয়োজনে স্মরণ করা হয়েছে তার নিজের জন্মভিটা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তার কবর জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত করা হয়। দেয়া হয় প্রতীকি গার্ড অব অনার। রাজনৈতিক কারণে মৃত্যুর পর যথাযথ সম্মান পাননি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষাসৈনিক আল মাহমুদ। সে কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাকে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মান ও স্বাধীনতা পদক প্রদানের দাবি জানানো হয়।
২০১৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি মৃত্যুর পর ঢাকায় বিখ্যাত এই কবিকে জাতীয়ভাবে যথাযথ সম্মান দিয়ে দাফনের চেষ্টা ব্যর্থ হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মোড়াইলে তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এখানে ১৭ই ফেব্রুয়ারি নামাজে জানাজা শেষে মোড়াইল গোরস্তানে অনেকটা নীরবে তাকে সমাহিত করা হয়। শনিবার দুপুরে শহরের নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কবি আল মাহমুদ গবেষণা কেন্দ্র ও স্মৃতি পরিষদ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে বক্তব্য রাখেন পৌরসভার সাবেক মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাবেদ রহিম বিজন, কবি মহিবুর রহিম, কবি আল মাহমুদ গবেষণা কেন্দ্র ও স্মৃতি পরিষদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সভাপতি ইব্রাহিম খান সাদাত, সাধারণ সম্পাদক জিহাদ হোসেন লিটন প্রমুখ। ইউনাইটেড কলেজের প্রভাষক শাহজাহান মিয়ার সঞ্চালনায় আরও বক্তৃতা করেন রাবেয়া জাহান তিন্নি, রাকিবুল ইসলাম শুভ, রুদ্র মো. ইদ্রিস। বক্তারা বলেন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে আল মাহমুদের অবদান অবিম্মরণীয়। শুধু রাজনৈতিক কারণে মৃত্যুর পরও তাকে উপযুক্ত সম্মান দেয়া হয়নি। কবি আল মাহমুদের সাহিত্যকর্ম নিয়ে গবেষণা ও স্মৃতি ধরে রাখার উদ্দেশ্যে সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গঠিত হয় কবি আল মাহমুদ গবেষণা কেন্দ্র ও স্মৃতি পরিষদ।
এর সভাপতি ইব্রাহিম খান সাদাত জানান, প্রতি বছর ১৫ই ফেব্রুয়ারি মৃত্যু দিবসে কবি আল মাহমুদ সাহিত্য মেলা ও সোনালী কাবিন পদক প্রদান করা হবে। আবার দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় কাজ করার কারণে তাকে প্রকৃত সম্মান থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আল মাহমুদ বাংলা একাডেমি ও একুশে পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। আমরা তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেয়ার দাবি করছি। সমাবেশ শেষে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে মোড়াইল গোরস্তানে পৌঁছে। সেখানে প্রয়াত কবির কবর জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত করা হয়। বিএনসিসি’র পক্ষ থেকে দেয়া হয় প্রতীকি গার্ড অব অনার। এ সময় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে কবির কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। উল্লেখ্য, কবি আল মাহমুদ ১৯৩৬ সালের ১১ই জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মৌড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।