ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে কক্সবাজার শহরের ৯০ শতাংশ এলাকা

Spread the love

টানা ১২ ঘণ্টার ভারী বর্ষণের ফলে পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহরের ৯০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালামাল। শত শত ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বহু মানুষ।

গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা দুই দশকের মধ্যে দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এই অতি ভারী বৃষ্টির মধ্যে পাহাড় ধসে ছয়জন মারা গেছেন।

শুক্রবার সকালে আবহাওয়ার এক সতর্কবার্তায় বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ তৈরি হওয়ার কথা জানিয়েছিল আবহাওয়া অফিস। সেটি বিকেল ৩টায় নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার কথা জানান আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা। তিনি বলেন, এর প্রভাবেই বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। কালকে থেকে বৃষ্টিপাত কমে যাবে।

আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারে। এর আগে ২০০১ সালের ১৪ জুন সর্বোচ্চ ৫৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে।

সেই হিসাবে দুই দশকের মধ্যে কক্সবাজারে শুক্রবার সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর গত বছরের ৬ অক্টোবর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝড়ে কিশোরগঞ্জের নিকলীতে।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোনের কলাতলী, প্রধান সড়কের বাজারঘাটা, টেকপাড়া, বাস টার্মিনাল, কালুরদোকান, বৌদ্ধমন্দির সড়কসহ বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এতে শহরের যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে দুর্ভোগে পড়ছেন অসংখ্য মানুষ।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হলেও ভারী বর্ষণ শুরু হয় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে। এরপর রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টার ভারী বর্ষণ পুরো শহরের আট লাখ মানুষের কর্মজীবন অনেকটাই থামিয়ে দেয়। এমন ভারী বর্ষণ গত ৫০ বছরে দেখেননি কেউ।

পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল জানান, ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, মোস্তাইক্যাপাড়া, বন্দরপাড়া, উত্তর নুনিয়াছটার কয়েকশ’ ঘরবাড়ি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে রান্নাবান্না বন্ধ থাকায় হাজার হাজার মানুষ খাবার ও পানীয় জল সংকটে আছেন।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ভারী বর্ষণ হলেই হোটেল-মোটেল জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন পর্যটকরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব বিরাজ করে। পাহাড় কাটার কারণে সে মাটি বৃষ্টির পানিতে নিচের দিকে নেমে পানি চলাচলের নালা ভরাট হয়ে গেছে। ফলে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। গত জুলাই মাসেও কয়েক দফায় ভারী বর্ষণে শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গনি ওসমানী বলেন, টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের শতাধিক গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন তাদের সরিয়ে আনতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয় সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরসমূহে ঝোড়ো হাওয়া বইয়ে যেতে পারে। কক্সবাজারসহ চার সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *