সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসাররা ‘সশস্ত্র বাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড় করাবেন না’

Spread the love

দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড় না করানোর আহ্বান জানিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসাররা।

রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এই আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া।

বক্তব্যে বলা হয়, সংগঠিত সব হত্যাকাণ্ড, জখম, গুলি, হামলা, ভাঙচুর, সন্ত্রাসের ঘটনার স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত হতে হবে জাতিসংঘের নেতৃত্বে ও তাদের অধীনে।

এতে বলা হয়, গত তিন সপ্তাহ ধরে সারা দেশে হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন গুম ও গণগ্রেফতারের যে ঘটনা চলছে তাতে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, মর্মাহত ও ব্যথিত। ‘অজস্র কিশোর-তরুণের অকাল জীবনাবসান ঘটেছে’ উল্লেখ করে আরও বলা হয়, ‘আজ অভিভাবক হিসেবে নিজেদের দায়মুক্ত ভাবতে পারছি না। তাই, বিবেকের তাড়নায় আমরা দেশবাসীর সামনে হাজির হয়েছি।’

‘দেশের নীতিনির্ধারকরা যদি বিবেক, বুদ্ধি ও হৃদয়হীন হয়ে না পড়েন, তাহলে গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড়, করুণ ও মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতো না। এসব হামলা, আক্রমণ ও প্রতিরোধে অঙ্গহানি ঘটেছে অগণিত মানুষের। অন্ধ হয়েছেন বহু সংখ্যক কিশোর ও তরুণ। অসহায় নাগরিকরা প্রয়োজনীয় ও জরুরি চিকিৎসাও পাচ্ছেন না। তার ওপর চলছে ব্লক রেইড করে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে বাড়ি, ঘর ও মেস চিনে শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে যাওয়ার মতো ভয়ংকর সব ঘটনা। মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন অথবা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন হাজার-হাজার নিরপরাধ কিশোর-তরুণ-যুবক।’

তারা মনে করেন, ‘সুস্থ মস্তিষ্কের কোনো বিবেকবান মানুষের পক্ষে দেশে এমন একটা যুদ্ধ পরিস্থিতি মেনে নেওয়া সম্ভব না। আমরা নিজেরা নিজেদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারি না। আমাদের দেশটাকে, এই রাজধানী ঢাকা ও জেলা শহরগুলোকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতে দিতে পারি না।’

সাবেক সেনাকর্মকর্তাদের ভাষ্য, ‘আক্রমণকারীরা গণআন্দোলনের প্রতিরোধের মুখে পিছপা হতে বাধ্য হলে, পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবহার করা হলো বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে। তাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, কখনো সম্মুখভাগে কখনো পেছনে ও পাশে দাঁড় করিয়ে অন্যান্য বাহিনীগুলো এই গণআন্দোলনের ওপর তাদের জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই এমন পরিস্থিতির দায় দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর নেওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী অতীতে কখনো দেশবাসী বা সাধারণ জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ায়নি। তাদের বুকে বন্দুক তাক করেনি।’

‘অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত এই রাজনৈতিক সংকটকালে আমরা ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি রাজপথ থেকে সশস্ত্র বাহিনীকে তাদের ছাউনিতে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

আমাদের সীমান্ত এই মুহূর্তে অরক্ষিত’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলন দমনের জন্য সীমান্ত থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিজিবি সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে সশস্ত্র বাহিনীকে অবিলম্বে সেনা ছাউনিতে ফিরিয়ে নিয়ে যেকোনো আপদকালীন সংকট মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *