ট্রেনের টিকিটের টাকা ফেরত দিচ্ছে রেলওয়ে

Spread the love

কোটা আন্দোলনের কারণে বৃহস্পতিবার রেলপথ অবরোধ হওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অনানুষ্ঠানিকভাবে তিন দিন বন্ধ থাকার পর শনিবার রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে।

টঙ্গী জংশন হয়ে ঢাকা-জয়দেবপুর ও ঢাকা-ব্রাক্ষণবাড়িয়া রেলরুটে তুরাগ ও তিতাস কমিউটার ট্রেন বৃহস্পতিবার থেকে যাতায়াত করার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে ট্রেন দুটির চলাচল বন্ধ রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার দুপুরে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনের স্টেশনমাস্টার রাকিবুর রহমান যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় বাণিজ্যিক বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গত ১৯ তারিখ থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওইদিন থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত ট্রেনের টিকিটের টাকা যাত্রীদের রিফান্ড করা হচ্ছে। যাদের টিকিট অনলাইন থেকে কেনা হয়েছে, তাদের অনলাইনে এবং যারা কাউন্টার থেকে কিনেছেন, তাদের কাউন্টারের মাধ্যমে টিকিটের বিপরীতে টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে যেসব আন্তঃদেশীয় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়েছে, সেসব ট্রেনের টিকিটের টাকা আন্তঃদেশীর কাউন্টার থেকে ফেরত দেওয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম জানান, ট্রেন না চলার কারণে টিকিট রিফান্ড করতে হচ্ছে। এটা সবচেয়ে বড় ক্ষতি। এখন পর্যন্ত ১৬ কোটি ২৯ লাখ টাকার বেশি টিকিট রিফান্ড করা হয়েছে যাত্রীদের। এ ছাড়া পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল মিলিয়ে রেলওয়ের মোট ক্ষতি হয়েছে ২২ কোটি ৩ লাখ ৮ হাজার টাকা।

এদিকে ১০৬টি আন্তঃনগরসহ ৩৫৯টি যাত্রীবাহী ট্রেন এবং দুই জোড়া আন্তঃদেশীয় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ৪ কোটি ১২ লাখ টাকা লোকসান গুনছে রেল। মৈত্রী, বন্ধন এক্সপ্রেসসহ আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীদের টিকিটের সমপরিমাণ মূল্য ফেরত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশির যুগান্তরকে বলেন, মৈত্রী, বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনে টিকিট ১ মাস আগ থেকেই কাটা হয়। আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয় ১০ দিন আগ থেকে। অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীদের টিকিট মূল্য ফেরত দেওয়া হবে।

কমলাপুর স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন জানান, বহু যাত্রী ভুল করে কমলাপুর স্টেশনে আসছে। অনেকেই জানতে চাচ্ছেন কবে থেকে ট্রেন চলাচল করবে। আমরা সঠিক উত্তর দিতে পারছি না।

ঢাকা রেলওয়ে জেলার পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘ইতঃপূর্বে রেলে ট্রেন, স্টেশন ভাঙচুরসহ নাশকতা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মামলা হয়েছে, আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আমরা এখন সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে আছি। এমন অবস্থায় ট্রেন পরিচালনা করতে হলে রেলওয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে জেলার (যেসব জেলাজুড়ে ট্রেন চলে) পুলিশ, ডিসিসহ প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। জেলা পুলিশ, র‌্যাব এবং মাঠে থাকা সেনাবাহিনীর সমন্বয়েই ট্রেন পরিচালনা করা হবে। তিনি বলেন, ‘ট্রেন সাধারণ মানুষের বাহন-এ ক্ষেত্রে নাশকতাকারীদের চিহ্নিত ও প্রতিরোধ করতে সাধারণ মানুষ সোচ্চার হবে। সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসবে। যোগ করেন রেল পুলিশের এ কর্মকর্তা।

রেলওয়ে মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছিলাম কম দূরত্বের মধ্যে চলা ট্রেনগুলোর কয়েকটি পরিচালনা করতে। বৃহস্পতিবার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, নিরাপত্তা এবং কারফিউর কারণে তা সম্ভব হয়নি। আমরা আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই ট্রেন পরিচালনা শুরু হবে। আমাদের লোকবল প্রস্তুত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *