সোনার তালুক! এমন এক জায়গা, যেখানে ‘সোনা’ ফলে। সোনার ফসল নয়। আসল সোনা। চোখধাঁধানো সোনালিরঙা কম ক্ষয়বিশিষ্ট বিরল ধাতু। ২০ বছর আগেও কেজিএফ বা কোলার গোল্ড ফিল্ড ছিল সেই সোনার আঁতুড়ঘর। বক্স অফিসে ঝড় তুলে দেওয়া কন্নড় ভাষার ছবির দৌলতে এখন কেজিএফ পরিচিত নাম। অথচ ২০০১ সালের পর গত ২১ বছর কেজিএফের কথা মনেই রাখেননি দেশের মানুষ। কালের নিয়মে এই ‘সোনার শহর’ এখন ‘ভূতের শহরে’ পরিণত হয়েছে। তবে কেজিএফের সেই সোনার খনি আবার নতুন করে চালু করার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
গত সপ্তাহেই কেজিএফ খনি নতুন করে খোলার কেন্দ্রীয় প্রস্তাবে মত দিয়েছে দিয়েছে ভারতের কর্ণাটক সরকার। পাশাপাশি, কেজিএফের হাজার একর জুড়ে থাকা ১৩টি খনি বর্জ্যের পাহাড় নিলামে তোলার প্রস্তাবেও সায় দিয়েছে ওই রাজ্যের সরকার।
কেজিএফের ১৩টি বর্জ্য পাহাড়ে প্রায় ৩.৩০ কোটি টন নিষ্কাশিত বর্জ্য পড়ে রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, প্রতি ১০০০ কেজি বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণে এক গ্রাম করে সোনা পাওয়া যাবে।
গত সপ্তাহে ভারতের কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে কেন্দ্রের তরফে কেজিএফ খনি নতুন করে চালু করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। এর পরেই সেই প্রস্তাবে সিলমোহর দেয় সরকার।
উল্লেখ্য, কেজিএফের খনিগুলি ‘ভারত গোল্ড মাইনস লিমিটেড’ (বিজিএমএল) সংস্থার মালিকানাধীন। বিজিএমএল একটি সরকারি সংস্থা, যা ১৯৭২ সালে কেজিএফে তৈরি করা হয়েছিল। তবে কেজিএফ খনির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই গুরুত্ব হারায় এই সংস্থা।সোনার অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ২০১৫ সালে কেন্দ্রের তরফে বিজিএমএলসহ পুরোনো খনিগুলি আবার চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কী ছিল না কেজিএফে! গল্ফ খেলার মাঠ, হাসপাতাল, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলকলেজ, ছেলে এবং মেয়েদের কনভেন্ট স্কুল, ক্লাব, মনোরঞ্জনের নানা ব্যবস্থা— সব। এমনকি কেজিএফে বসবাসকারী ব্রিটিশ এবং ভারতীয় হর্তাকর্তাদের জন্য ব্রিটেনের স্থাপত্যের ছাদে বড় বড় বাংলোও তৈরি হয়েছিল।
যদিও কোলারের এই ‘মিনি ইংল্যান্ডে’ প্রবেশাধিকার ছিল না খনিতে কাজ করা শ্রমিকদের। তারা থাকতেন কোলারের ঝকঝকে আলোর বাইরে। ছোট ছোট খুপরির মতো ঘরে। সেই সব এলাকাকে বলা হত কুলি লেন। ঘরগুলিকে বলা হতে ‘শান্টি’। সেখানে কষ্ট করে থাকতেন খনিশ্রমিকেরা। তবু বেঙ্গালুরুসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসতেন কোলারে কাজ করতে। কারণ কোলারই তখন উন্নতির কেন্দ্র।
১৯০২ সাল পর্যন্ত ভারতের মোট সোনা উৎপাদনের ৯৫ শতাংশই আসত কোলার থেকে। এই শতকের গোড়া পর্যন্তও সোনা উত্তোলন হত কেজিএফ থেকে। শেষ বার কেজিএফ থেকে সোনা উত্তোলন হয় ২০০১ সালে।
সোনার খনির শ্রমিকেরাই এখন কোলারের একমাত্র বাসিন্দা। তবে তাদের সংখ্যা কম নয়। মোট ৪০০টি শ্রমিক কলোনি মিলিয়ে আড়াই লাখ মানুষ বাস করেন কেজিএফে।
সে দিনের সোনার শহর আজ মৃতপ্রায়। কোলারের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য বহু প্রস্তাব জমা পড়েছে সরকারের কাছে। পর্যটনের জন্য কেজিএফকে নতুন করে সাজানোর কথা বলা হয়েছে। প্রাসাদোপম বাংলোগুলো সারিয়ে হোমস্টে-র প্রস্তাবও রয়েছে।
কিন্তু সে সবই প্রস্তাবের আকারেই রয়ে গিয়েছিল এত দিন। এবার এক সময়ের সেই ‘সোনার শহর’কে পুনরুজ্জীবিত করতে খনি নতুন করে চালুর সিদ্ধান্ত নিল ভারত সরকার।