ঐতিহাসিক জয়ে সেমির স্বপ্ন মজবুত করল আফগানিস্তান

Spread the love

সেমিফাইনালে যেতে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ১৪৯ রানের সমীকরণ সহজ ছিল। জিতলেই সেমিফাইনাল। তাদের জয়ে ভারতও শেষ চারে উঠে যেত। তবে বাঁচা-মরার ম্যাচ হতাশার পরাজয়কে সঙ্গী করল অজিরা। সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ে সেমিফাইনালের স্বপ্ন মজবুত করল আফগানিস্তান।

সুপার এইটের লড়াইয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ২১ রানে হারিয়েছে আফগানরা। যার ফলে, সেমিফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখল দলটি। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে হারালেই এবং ভারতের কাছে অস্ট্রেলিয়া হারলে ইতিহাস গড়বে তারা। তবে আজকের ম্যাচটি আফগানদের ইতিহাসে সবার ওপরেই লেখা থাকবে! অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটাই যেকোনো ফরম্যাটে তাদের প্রথম জয়।

১৪৯ রান তাড়া করতে নেমে পাওয়ার প্লের ভেতরই সাজঘরে ফেরে অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার। প্রথম ওভারে ট্রাভিস হেডকে (০) বোল্ড করেন নাভিন উল হক। পরের ওভারে অধিনায়ক মিচেল মার্শকেও (১২) ফেরান ডানহাতি এই পেসার। পাওয়ার প্লের আগে ডেভিড ওয়ার্নারকে (৩) বিদায় করেন মোহাম্মদ নবি।

৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা অস্ট্রেলিয়ার হাল ধরেন ম্যাক্সওয়েল ও মার্কাস স্টয়নিস। ৩৯ রানের জুটিতে চাপ কাটিয়ে ওঠেন তারা। আর ম্যাক্সওয়েল ফেরেন রানের ছন্দে। এবারের আসরে এর আগে একদমই হাসেনি তার ব্যাট। কিন্তু ঠিক তখনই আগমন গুলবাদিন নায়েবের। সেন্ট ভিনসেন্টের উইকেটকে রীতিমত কথা বলিয়ে ছেড়েছেন তিনি। মিডিয়াম পেসে ছোট ছোট সুইংয়ে অস্ট্রেলিয়া ব্যাটারদের জন্য তৈরি করেছেন বিপদ।

১১তম ওভারে হাতে প্রথম বল তুলে নেন নায়েব। এসেই তৃতীয় বলে স্টয়নিসকে (১১) ফেরান এই মিডিয়াম পেসার। পরের ওভারে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন টিম ডেভিডকে। নিজের তৃতীয় ওভারে এসে সবচেয়ে বড় মাছ শিকার করেন তিনি। সেদিন অতিমানবীয় ইনিংস খেলে আফগানদের হৃদয় ভাঙা ম্যাক্সওয়েল আজও হাঁটছিলেন একই পথে। কিন্তু এবার তা হতে দেননি নায়েব। তার কিছুটা ওপরের দিকের ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে থাকা নুর আহমেদের হাতে ক্যাচ দেন ম্যাক্সওয়েল। ৪১ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৯ রানে ফেরেন ডানহাতি এই ব্যাটার।

বিপদ কেটে যাওয়ার পর আফগানিস্তানের জয় আর ঠেকায় কে! চার বল হাতে রেখেই অস্ট্রেলিয়াকে ১২৭ রানে গুটিয়ে দেয় তারা। ৪ ওভারে স্রেফ ২০ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরা হন নায়েব। সমান রান দিয়ে ৩ উইকেট ঝুলিতে নেন নাভিন।

সেন্ট ভিনসেন্টে এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ শুরু পায় আফগানিস্তান। উদ্বোধনী জুটি থেকেই আসে ১১৮ রান। এবারের আসরে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহীম জাদরানের তৃতীয় শতরানের জুটি। ব্যক্তিগত অর্ধশতকের পর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি দুই ওপেনার। ৪৯ বলে সমান ৪টি করে চার ও ছক্কা মেরে ৬০ রান করা গুরবাজ তুলে নিয়ে এ জুটি ভাঙেন মার্কাস স্টয়নিস। ১৭তম ওভারে এসে ইব্রাহীম (৫১) ও আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে সাজঘরে ফেরান অ্যাডাম জাম্পা।

এরপর আফগানদের রানের চাকা আরও কমিয়ে দেয় প্যাট কামিন্সের হ্যাটট্রিক। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষেও হ্যাটট্রিকের দেখা পেয়েছিলেন এই পেসার। প্রথম বোলার হিসেবে এবার টি-টোয়েন্টিতে পরপর দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়লেন তিনি।

১৮তম ওভারের শেষ বলে রশিদ খানকে সাজঘরে ফেরান কামিন্স। তাকে উড়িয়ে মারতে চাইলেও লং অনে টিম ডেভিডের হাতে ধরা পড়েন রশিদ। ইনিংসের শেষ ওভারও কামিন্সের হাতে বল তুলে দেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক মিচেল মার্শ। ওভারের প্রথম বলেই করিম জানাতকে শিকার করেন ডানহাতি এই পেসার। এবারও লং অনে সেই ক্যাচ নেন ডেভিড। হ্যাটট্রিক বলে ঠিকমতো টাইমিংস করতে পারেননি গুলবাদিন নায়েব। ক্যাচ তুলে দেন লেগে থাকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের কাছে। পরের বলে ডাবল হ্যাটট্রিকের খুব কাছাকাছিও চলে গিয়েছিলেন কামিন্স। কিন্তু নানগেয়ালি খারোতের ক্যাচ ফেলে দেন ডেভিড ওয়ার্নার। এরপর আফগানরা থামে ৬ উইকেটে ১৪৮ রান নিয়ে। এতোটুকু পুঁজি নিয়েই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিল রশিদ খানের দল!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *