ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর দুইদিনের ভারী বর্ষণে বিপজ্জনভাবে পানি বেড়ে গেছে সিলেটের নদ-নদীগুলোতে। সুরমা, কুশিয়ারা, সারি ও সারিগাঙ্গ নদীর ছয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমার অনেকটা ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। এতে প্লাবিত হয়ে গেছে পুরো সিলেট।মহানগর ও জেলাজুড়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৫ লাখ মানুষ ।
গত ২৮ মে রাতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সিলেটে। সেই পানি পুরোপুরি নামার আগেই সোমবার (১৭ জুন) ঈদের দিন শেষরাত থেকে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। এর সঙ্গে পাহাড়ি ঢল মিলে রোববার সকালেই তলিয়ে যায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নগরীর অনেক এলাকা। প্লাবনে জেলার বিভিন্ন স্থানেও অবনতি হয় বন্যা পরিস্থিতির। পরদিন সোমবার বিকালে বৃষ্টি থামলে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে পানি। কিন্তু মঙ্গলবার (১৮ জুন) ভোররাত থেকে ফের বৃষ্টি শুরু হলে হু হু করে বাড়তে থাকে সিলেটের সব নদ-নদীর পানি।
এরই মধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে সিলেট মহানগরীর সব নিচু এলাকা। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর পুরোটাই এখন পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় গলা পর্যন্ত পানি। এছাড়া যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ মহানগরের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে বৃষ্টি আর ঢলের পানিতে।
পথঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলা। তলিয়ে গেছে কয়েকশ’ বিঘা কৃষিজমি, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
জেলা প্রশাসন জানায়, মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেট জুড়ে ৮৬৪টি গ্রাম ও এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রাম ও এলাকার ৩ লাখ ৭১ হাজার ৫০৭ জন মানুষ এই মুহূর্তে বন্যা আক্রান্ত। এর মধ্যে সিলেট মহানগরের ৪টি ওয়ার্ডের ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে খোলা হয়েছে ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্র।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বইছে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে। একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এছাড়া সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটে সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি ৭৬ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেটের এই ভারী বর্ষণ আরও তিনদিন জারি থাকবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।