জি৭ শীর্ষ সম্মেলনে অস্থিতিশীল বিশ্ব নিয়ে আলোচনা

Spread the love

বৃহস্পতিবার ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির নেতৃত্বে দেশটিতে শুরু হয়েছে তিনদিনব্যাপী ‘গ্রুপ অফ ৭’ বা জি৭-এর শীর্ষ সম্মেলন। তবে, মেলোনি নিজে ছাড়া, আগত নেতাদের প্রত্যেকেই বিপাকে বা বিপন্ন অবস্থায় এবছরের জি৭-এ অংশগ্রহন করছেন, যা পশ্চিম জুড়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার বার্তা দিচ্ছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ থেকে শুরু করে চীনের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা পর্যন্ত ইতিমধ্যেই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া নেতাদের এই সমাবেশের ফলাফলও ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে না।ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক দেশটির নির্বাচন থেকে তিন সপ্তাহ দূরে রয়েছেন, যেখানে তার কনজারভেটিভ পার্টি ক্ষমতাচ্যুদ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর দল ইউরোপীয় নির্বাচনে কট্টোর ডানপন্থীদের কাছে ব্যাপক ভোটে পরাজিত হওয়ার পর সংসদীয় নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন।জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোল্জ ও তার সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টিও আসন্ন নির্বাচনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার পূর্বসূরি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আসন্ন নির্বাচনে নড়বড়ে অবস্থানে রয়েছেন।এমনকি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা তার লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিভেদের সম্মুখীন হয়েছেন এবং এই শরতে তার ক্ষমতা হারাতে পারেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, যিনি আট বছরেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার পর জনসাধারণের হতাশার মুখে পড়েছেন। বিশে^ জি৭ এর ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ নতুন কিছু নয়, কারণ এই সাতটি দেশ বৈশ্বিক মোট দেশীয় পণ্যের একটি ক্রম হ্রাসমান অংশের প্রতিনিধিত্ব করে।পরিবর্তিত বিশ্বের কথা মাথা রেখে মেলোনি কিছু অ-পশ্চিমা নেতাদেরও ইতালিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়েব এর্দোগান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ। তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং পোপ ফ্রান্সিসকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই নেতাদের অনেকে নিজেদের ঘরোয়া চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।বিশ্লেষক এবং কূটনীতিকদের মতে, দেশীয় রাজনীতি জি৭ এর ব্যবসায় বড় এবং ছোট উপায়ে অনুপ্রবেশ করবে। মোদি সবেমাত্র তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন, কিন্তু তার দলের সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অদৃশ্য হয়ে গেছে। স্থানীয় নির্বাচনে এরদোগান ধাক্কা খেয়েছেন। যদিও এই নেতারা মূল অধিবেশনে অংশ নেবেন না, কেউ কেউ বাইডেন এবং অন্যান্য নেতাদের সাথে পৃথক বৈঠক করবেন, কিন্তু তা বিশ্বে শক্তির গতিশীলতা কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, তার অনুস্মারক হিসাবে কাজ করবে।ব্রিটেনে একটি নতুন সরকার আসার সম্ভাবনার মধ্যে সুনাক চীনের সাথে বাণিজ্য বা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বড় প্রতিশ্রুতিতে সম্মত হবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিবর্তে, শীর্ষ সম্মেলনে তার অংশগ্রহণ একটি বিদায়ী সফর হতে পারে। অতি-ডানপন্থী পশ্চিমা রাজনৈতিক দলগুলো মুক্ত বাণিজ্যের প্রতি বেশি নেতিবাচকতা পোষণ করে, কিন্তু তারা চীনের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞার কম সমর্থন করে। বাইডেন প্রশাসন চীনের বৈদ্যুতিক যানবাহন, ব্যাটারি এবং সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানির উপর উচ্চ শুল্ক আরোপের জন্য ইউরোপকে চাপ দিয়েছে, যেমনটি মে মাসে করেছিল। এটি রাশিয়ার উপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য সমর্থন জোগাড় করার চেষ্টা করছে, যা মার্কিন চাপের একটি বড় বৃদ্ধি। এটি সেখানে ব্যবসা করে এমন সংস্থাগুলির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে ইউরোপীয়রা জানে যে, সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাইডেনের সিদ্ধন্তিগুলো বাতিল করে দিতে পারেন।এমনকি দেশীয় রাজনৈতিক অস্থিরতার আগেও, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমা ব্যাঙ্কগুলির দ্বারা হিমায়িত রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতির প্রায় ৩০হাজার কোটি ডলার নিয়ে কী করবে, তা নিয়ে একমত হতে পারেনি। হোয়াইট হাউস প্রাথমিকভাবে ইউক্রেন পুনর্গঠনে ব্যবহার করার জন্য পুরো অর্থ বাজেয়াপ্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলো এ ধরনের পদক্ষেপ বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে তুলবে এই আশঙ্কায় এড়িয়ে গেছে।কূটনীতিকরা বলেছিলেন যে, চীনের বাণিজ্য বা রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞার সমস্ত বিষয়ের পাশাপাশি, নেতারা জি৭ শীর্ষ সম্মেলনে আরও দুটি বড় ইস্যুতে একত্রিত হয়েছেন: ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন বাড়ানো এবং ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধে যুদ্ধবিরতির জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রচেষ্টার জন্য। ব্রিটেনের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পিটার রিকেটস বলেন, ‘নেতাদের দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি সম্ভবত একটি কঠিন ঘরোয়া পরিবেশের উপর থেকে নজর ঘুরিয়ে দেয়া।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *