দেশের কারাগারে ১৬ দেশের ৩৬৩ জন বিদেশি নাগরিক আটক রয়েছে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আটককৃত নাগরিকদের মধ্যে বেশিরভাগ ভারতের নাগরিক।
১২ জুন, বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ১৬টি দেশের নাগরিক আটক রয়েছে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি ভারতের। দেশটির ২১২ জন নাগরিক বাংলাদেশের কারাগারে আটক আছে। ভারতীয়দের মধ্যে ১১ জন কয়েদি, ৫৩ জন হাজতি এবং মুক্তিপ্রাপ্ত ১৪৮ জন।
এরপর মিয়ানমারের আটক রয়েছে ১১৪ জন। এরমধ্যে ৫৮ জন কয়েদি, ৫০ জন হাজতি ও মুক্তিপ্রাপ্ত ৬ জন। অন্যান্য দেশের মধ্যে পাকিস্তানের ৭ জন, নাইজেরিয়া ও মালয়েশিয়ার ৬ জন করে, চীন ও বেলারুশের ৪ জন করে, ক্যামেরুন ও পেরুর ২ জন করে এবং আমেরিকা, বাতসোয়ানা, জর্জিয়া, তানজানিয়া, মালয় ও অ্যাংগোলার ১ জন করে নাগরিক আটক রয়েছে।
চট্টগ্রাম-১ আসনের মাহবুব উর রহমানের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন সকল বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) ক্যাম্পগুলো জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী সংগঠনগুলোকে চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে আইনরে আওতায় আনা হচ্ছে।
তিনি জানান, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ৩১ মে ২০২৪ পর্যন্ত হত্যা ও অস্ত্র মামলায় ৯৯৪ জন বাস্তচ্যুত মিয়ানমার নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানগুলোকে গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের দমনে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিলেট কারাগারসহ দেশের অন্যান্য কারাগারে বিচারবহির্ভূত কোনও বন্দি আটক নেই। তবে ৫ বছরের বেশ সময় ধরে ৬২১ জন বন্দির মামলা চলমান রয়েছে।
আরেক তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মাদকাসক্তদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে এবং চিকিৎসাপ্রাপ্ত মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে যুব উন্নয়ন অধিদফতর, মহিলা বিষয়ক অধিদফতর, সমাজসেবা অধিদফতর ও বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) হতে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর হতে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা শেষে রিকোভারি এডিক্টদেরকে তাদের পছন্দের ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যুব উন্নয়ন অধিদফতরে পাঠানো হচ্ছে। যুব উন্নয়ন অধিদফতরের জেলা পর্যায়ে রিকোভারি এডিক্টদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকার তেজগাঁওয়ের ১২৪ শয্যাবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রকে ১৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালে উন্নীতকরণ প্রকল্প, ৭টি বিভাগীয় শহরে ১০ একর জায়গার উপরে ২০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প, প্রতিটি জেলায় পর্যায়ক্রমে একশ’ শয্যাবিশিষ্ট একটি করে মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা শেষে তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমাজের মূল স্রোতে পুনর্বাসিত করা সম্ভব হবে।
আসাদুজ্জামান খান জানান, সারাদেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ২০২৩ সালে ৯৭ হাজার ২৪১টি মামলা দায়ের করে ১ লাখ ২০ হাজার ২৮৭ জন মাদক চোরাকারবারীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ২৯ হাজার ৩৩৬টি মামলা দায়ের করে ৩৬ হাজার ৫৯২ জন মাদক চোরাকারবারীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনেছে।